অনেকদিন পর বছরের শেষ মেলা হচ্ছে। আমি আমার কাজিন ত্বোয়া এবং মুরছালিন, রিদোয়ানসহ, বাবা-মা ও ওঐ মেলায় আমাদের সাথে গিয়েছেন। ত্বোয়া চলে গেল পছন্দের পুতুল ও খেলনা কিনতে এদিকে মুরছালিন, রিদোয়ান এবং আমি আফুয়ান গেলাম খেলনা বন্দুক ও গাড়ি কিনতে। বাবা-মা এটা একদমই পছন্দ করলেন না কিন্তু যেহেতু এটা বছরের শেষ মেলা তাই আর উচ্চবাচ্য করলেন না। গেলাম খেলনা কিনতে, কিনলাম একটি বন্দুক ও পছন্দ না হওয়াতে গাড়ি না কিনেই ফিরে এলাম।
আগামীকাল সকালে যাব গ্রামের বাড়ীতে তাই বাসায় সেই ধুন্ধুমার প্রস্তুতি। ব্যাগ গোছাতে গোছাতেই সময় পার হয়ে যাচ্ছে। এটা নিই তো ওটা বাদ পড়ে যায়। যাই হোক সব প্রস্তুতি নিতে নিতে রাত এগারোটা বেজে গেল, বাকি আছে মাত্র চার ঘন্টা কারণ, ঠিক পাঁচটায় আমাদের নিতে একটি সাদা মাইক্রোবাস আসবে। তাই ঘুমাতে গেলাম, কিন্তু এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসল না। রাত সাড়ে তিনটার দিকে চোখ লেগে আসল এবং চারটা বিশ মিনিটে মা সবাইকে ডেকে তুললেন। চোখ কচলাতে কচলাতে গাড়িতে উঠে বসলাম। ১২ সিটের গাড়ী হওয়ায় সবারই জায়গা হল। বয়সে ছোট বলে আমি, ত্বোয়া, মোরছালিন আর রিদুয়ান এর জায়গা হল একদম পিছনের সিটগুলোতে। গাড়ি ছাড়তে ছাড়তে সকাল ৬ টা বেজে গেল।
গাড়ী রওয়ানা হল গন্তব্যের দিকে। মাঠ, ঘাট পথ পাড়ি দিতে দিতে আমরা ছুটে চলছি গ্রামের দিকে। পথে বাবার বন্ধু কামাল আঙ্কেল উঠলেন গাড়িতে। চলতে চলতে আমরা দুপুরে হাইওয়ের একটা ভালমানের রেষ্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করলাম। গাড়ি আবার চলতে শুরু করল, ঠিক সন্ধ্যায় আমাদের গাড়িটা একটা নির্জন বনভূমির উপর দিয়ে পার হচ্ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ হয়ে গাড়ির টায়ার ফেটে গেল। সাথে সাথে গাড়ি থেমে গেল। গাড়ি থামতেই চারদিক অসম্ভব নিস্তব্ধতা নেমে আসল। এছাড়াও দেখা গেল ইঞ্জিনে কি যেন সমস্যা হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও গাড়ির চাকা পরিবর্তন করা সম্ভব হলেও গাড়িটি চালু করা সম্ভব হল না। জনবসতি আমরা প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ফেলে এসেছি আর সামনে এই ভয়ংকর জঙ্গল কতদূর বিস্তৃত তা আমাদের কারোরই জানা নেই। অগত্যা সেখানেই আমরা রাত্রিযাপন করব বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হল।
কিছুক্ষন পর পর দুই একটি বাস গেল। তারপর হঠাৎ করে বাসগুলোর ইঞ্জিনের শব্দ দূরে মিলিয়ে গেল। আমাদের ড্রাইভার আঙ্কেল ছোটদের উদ্দেশ্যে একটি গল্প শুরু করলেন। পথ চলতে চলতে গল্পটি বলার কথা ছিল কিন্তু রাস্তায় ড্রাইভার আঙ্কেল সময় করে উঠতে পারেননি। এখন যেহেতু করার কিছুই নেই তাই আমরা সবাই গোল হয়ে বসলাম গল্পটি শুনার জন্য। অবশ্য ড্রাইভার আঙ্কেল এটাকে নিছক গল্প বলতে নারাজ তার ভাষায় এটা তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি সত্য ঘটনা বা সময়ের জন্য এটা ইতহাস হতে পারে।
- চলবে